মিঠা পানির গলদা চিংড়ি, কাঁচা সোনার খনি

From WikiEducator
Jump to: navigation, search



মিঠা পানির গলদা চিংড়ি, কাঁচা সোনার খনি

মাহমুদুল হক ফয়েজ

প্রাক কথনঃ

Chingree.jpg
মিঠাপানির গলদা চিংড়ি চাষ করে নোয়াখালীর জলাবদ্ধ জলাভূমিগুলো হয়ে উঠতে যাচ্ছে এক একটি কাঁচা সোনার খনি। ইতি মধ্যেই বৃহত্তর নোয়াখালীর পুকুর ও বদ্ধ জলাশয়গুলোতে গলদা চিংড়ি চাষ করে অভাবনীয় সফলতা পাওয়া গেছে। আশার সঞ্চার হয়েছে গরিব অসহায় চাষিদের। নোয়াখালীর প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর একর কৃষি জমিতে বর্ষামৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে কোন ফসল হয় না। শুকনো বোরো মৌসুমে মাত্র একটি ফসল পাওয়া যায়। এর জন্য কৃষকরা দীর্ঘদিন চরম কষ্ট ও বেকারত্বে ভূগছিল। এই জমি গুলো আবার হাওর অঞ্চলের মত বিশাল এলাকা জুড়েও নয়। কৃষকদের টুকরো টুকরো জমিগুলোর চতুর্দিকে উঁচু আইল, বাঁধ বা গ্রামীণ রাস্তা হওয়ার ফলে পানি বদ্ধ হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও কয়েকটি জমি মিলে ছোট খাট বিলের মত হয়ে গেছে, তার চতুর্দিকেই গ্রাম। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় ‘হাতর’ বা ‘ডগি’। একসময় এগুলোতে প্রচুর স্থানীয় জাতের প্রচুর ছোট মাছ প্রাকৃতিক ভাবেই পাওয়া যেতো। রাসায়নিক কৃষির ফলে এগুলো প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এই ডগি গুলোতে আগের মত আর দেশীয় ছোট মাছ পাওয়া যায়না। এই মাছ গুলোকে পরিচর্যা করেই বদ্ধ ‘ডগি’ বা জলাশয়গুলোর চতুর্দিকের আইল, রাস্তা বা বাঁধ উঁচু ও মেরামত করে যে ক’ মাস পানি থাকে সে সময় গলদা চিংড়ি চাষ করার ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট হলো এতে কোনো প্রকার রাসায়নিক সার কিংবা কীটনাশক ব্যবহার করা হয়না। সম্পূর্ণ পরিবেশ সম্মত ভাবে এর চাষ হয়। গলদা চিংড়ি মিঠা পানিতে চাষ হয়। এখন চিংড়ি রফতানী থেকে বিপুল পরিমান বৈদেশীক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। জলাবদ্ধতার ফলে যে সময়গুলোতে জমিতে কোন চাষ হতো না সেই সময়টুকুতেই চিংড়ি চাষ করে রফতানী যোগ্য আকারে উৎপাদন করা যায়। এতে গরিব কৃষকরা কাজ ও আয়ের ত্রে খুঁজে পেয়েছে। এই জমিগুলোতে সীমিত আকারে অনেকে কার্প জাতীয় মাছ চাষ করে আসছিল। কিন্তু ওগুলোর স্থানীয় বাজার মূল্য অনেক কম। অথচ এই জমিতে একই সময়ে সমান পুঁজি ও শ্রমবিনিয়োগ করে চিংড়ি থেকে প্রচুর লাভ পাওয়া যায়। রুই কাতলা কার্প জাতীয় মাছ যেখানে বর্তমান বাজার মূল্য মন প্রতি দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। সেখানে চিংড়ির বাজার মূল্য পঁচিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা। তাই জলাবদ্ধতাকে যে কৃষকরা

এতদিন অভিশাপ বলে আখ্যায়িত করে আসছিল তারাই আবার বলছে জলাবদ্ধতা আমাদের জন্য এখন আশির্বাদ। এই উৎপাদনে উৎসাহ যুগিয়েছে, ‘গ্রেটার নোয়াখালী একোয়াকালচার এক্সটেনশন প্রজেক্ট’ সংক্ষপে জি,এন,এ,ই,পি। বর্তমানে এর নাম হয়েছে আর,এফ,এল ডি,সি, বা রিজিওনাল ফিসারিজ এন্ড লাইভষ্টক ডেভেলপমেন্ট কম্পোনেন্ট। নোয়াখালী মৎস্য অধিদপ্তর, ডেনিশ সরকারের উন্নয়ন সংস্থা ডানিডার আর্থিক অনুকুল্যে মিঠা পানির চিংড়ি চাষের এই স্বপ্নময় প্রকল্পের এক ব্যপক কর্মসূচী গ্রহন করেছে। নোয়াখালীর সোনাপুরে স্থাপন করা হয়েছে উপমহাদেশের বৃহত্তর গলদা চিংড়ি হ্যাচারী। ছোট আকারের আরো দুটি হ্যাচারী গড়ে উঠেছে ব্যক্তি উদ্যোগে। উক্ত প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার রেশাদ আলম জানালেন এই তিনটি প্রকল্প থেকে বছরে দুই কোটি চিংড়ি পোনা উৎপাদন হচ্ছে। তিনি জানান তৈরী পোষাকের পরেই চিংড়ি আমাদের অন্যতম রফতানী খাত। বাগদা চিংড়ির থেকে গলদা চিংড়ি চাষ খরচ অনেক কম এবং এ চিংড়ি অনেক বেশী পরিবেশসম্মত। এ চাষে বাগদার মত কোনো লবন পানির ব্যবহার হয়না এবং বনায়নেরও কোনো ক্ষতি হয়না।

তিন বন্ধুর উদ্যোগঃ

সুধারাম থানার দেিণ থানার হাটে প্রায় পাঁচ একর জমিতে তিন বন্ধু মিলে গড়ে তুলেছে একটি মৎস্য খামার। তিন বন্ধু কামাল, শাকিল আর আনিছ ছিলো বেকার যুবক। তাদের সব সময় স্বপ্ন ছিলো তিন জনে মিলে একটা কৃষি প্রকল্প গড়ে তুলবে। কিন্তু তারা ঠিক সুবিধা করতে পারছিলোনা। শেষে মৎস্য বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেয়ে এই প্রকল্প গড়ে তুলে। সোনাপুর চিংড়ি হ্যাচারী থেকে চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করে তারা অন্যান্য মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ শুরু করে ২০০২ সনে। একটি ছোট নার্সারী পুকুরে প্রথমে ছোট পোনাগুলো ছাড়া হয়েছিলো। পোনার সংখ্যা ছিলো এক হাজার। পাঁচ মাস পর প্রকল্প এলাকায় ছাড়ার উপযুক্ত হলে তারা দেখতে পায় ৮শ ৮৮টি চিংড়ি পাওয়া গেছে। সাধারনত: এ অবস্থায় নার্সারী পুকুরে পঁচাত্তর ভাগ পোনা টিকে যায়। সে হিসাবে এখানে অনেক বেশী পোনা পাওয়া গেছে। প্রকল্পের এক অংশীদার কামাল উদ্দিন জানালেন, ‘সমন্বিত পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ করলে বহুগুণ বেশী লাভ পাওয়া যায়’’। নোয়াখালী মৎস্য অধিদপ্তরের সমন্বয়ক দীন মোহাম্মদ জানালেন’ হ্যাচারী থেকে সংগ্রহ করা ছোট পোনাগুলো প্রথমেই বড় পুকুর বা প্রকল্পে ছাড়া হয়না। নার্সারী ছোট পুকুরে বিশেষ যতœ আত্তির পর পাঁচ ছয় মাসের মাথায় পোনা গুলো সংগ্রহ করা হয়। তখন এর দৈর্ঘ হয় তিন চার ইঞ্চি। এই পোনাগুলোই পরে বড় পুকুর বা প্রকল্পে ছাড়া হয়। বৃহত্তর নোয়াখালী মৎস্য সম্প্রসারণ প্রকল্প বা জি,এন,এ,ই,পি বর্তমানে ‘আরএফএলডিসি’ মূলতঃ নিম্নবিত্তের ছোট ছোট পরিবারগুলোকে সরাসরি সহযোগীতা করে আসছে। কিন্তু তারা কোন প্রকার আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করেনা। কারিগরী জ্ঞান সহ মৎস সংরণ ও বাজারজাত করনের যাবতীয় সহযোগীতাই করছে। এ বিষয়ে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে গড়ে তুলছে সমাজ ভিত্তিক সংগঠন বা ‘সিবিও’। এদের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ। মৎস্য চাষ সম্পর্কিত যাবতীয তথ্য গ্রামের কৃষকরা এখন থেকে পেয়ে থাকে। বৃহত্তর নোয়াখালীতে ২০০৬-০৭ পর্যন্ত ১১৫টি সিবিও গঠিত হয়েছে। ২০১২ সালে এ সংখ্যা ধার্য করা হয়েছে ২৫০ টি। এই সিবিও গুলো একটি কমিটির মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান রূপে পরিচালিত হচ্ছে। কমিটির সদস্যরা এলাকারই কৃষক। শুধু মৎস্যই নয এখানে তারা কৃষি সংক্রান্ত নানান বিষয়ে অবগত হতে পারেন। এই মৎস্য চাষ প্রকল্পের অনেকেই আছেন নিরিহ সহায় সম্ভল হীন মহিলা। এই মহিলাদের কারো স্বামী মারা গেছেন, কেউ অম, অথবা তালাক প্রাপ্ত।

মধ্য চরবাগ্গার হনুফা বেগমঃ

হনুফা বেগমের স্বামী সৈয়দ আহাম্মদ ২০০০ সালে টিউমার রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরন করেন। ৪ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে তিনি খুব অসহায় হয়ে পড়েন। ’৯০ সনে সরকার থেকে তারা দেড় একর কৃষি জমি বন্দোবস্ত পায়। সেই জমিতে বিশ ডিসিমেল আয়তনের একটি পুকুর কেটে ঘরের ভিটা ও কিছু জায়গা উচাঁ করেছে। উঁচু যায়গায় নারকেল, আম, সুপারী সহ নানান গাছ লাগানো হয়েছে। কিন্তু স্বামী মারা যাওয়ার পর হনুফা বেগম ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। স্বামীর চিকিৎসার খরচ ও সংসারের খরচ মিটানোর জন্য ভিটে ছাড়া বাকী জমি স্থানীয় এক মহাজনের কাছে নয় হাজার টাকায় বন্ধক রাখেন। এর পর হনুফা বেগম ৪/৫ বছর বহু চেষ্টা করেও জমিটি বন্ধক থেকে আর ছাড়াতে পারেনি। পুরো জমিটি যখন হাতছাড়া হয়ে সার উপক্রম হলো, তখন তিনি যোগাযোগ করলেন প্রকল্প সমন্বয়কের সঙ্গে। পরামর্শ অনুযায়ী তিনি তার ছোট পুকুরে পরিকল্পিত ভাবে তিন হাজারটি গলদা চিংড়ির পোনা ছাড়েন। প্রয়োজনীয় খাওয়া ও যতœ আত্তির পর ৫ মাসে তিনি প্রকল্পে ছাড়ার উপযোগী করে বিক্রির জন্য ধরে নেন। ধরার সময় গুণে দেখেন ২,৪৮২ টি মাছ টিকে গেছে। প্রতিটি চিংড়ি পাঁচ টাকায় তিনি বিক্রি করেন। সমস্ত খরচ পাতি বাদে তার লাভ হয় ১২ হাজার টাকা। এই টাকা থেকে নয় হাজার টাকা দিয়ে তিনি তার বন্ধকী জমি ছাড়িয়ে নেন। বাকী টাকায় একটি ছাগল হাঁস ও মুরগী কিনেন। এ বছর তিনি আবার তৈরী হচ্ছেন গলদা চিংড়ি চাষ করার জন্য। লক্ষ্মীপুরের মতির হাট থেকে নদী ভাঙ্গনের ফলে কপর্দকশুণ্য হয়ে হনুফারা এক টুকরো জমির আশায় এ অঞ্চলে ছুটে আসে। তার পৈত্রিক ও স্বামীর জমি জমা ঘর বাড়ি মেঘনায় গ্রাস করে ফেলেছে। সেখানে আর যাওয়ার উপায় নেই। বড় ছেলে জাফর উল্যাহ চট্রগ্রামে রিক্সা চালায়। বৌ-সংসার নিয়ে সেভানেই থাকে। হনুফার এক মাত্র মেয়ে তসলিমা বেগম ৪র্থ শ্রেনীতে পড়ে। হনুফা বেগমের আশা মেয়েকে অনেক দূর পড়াবে। ভাল ঘর দেখে বিয়ে দেবে। নিজের উপরও তার এখন অনেক আস্তা। পুকুরে অন্যান্য মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে দেখে এখন এলাকায় অনেকেই উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। হনুফা বলেন, ‘ইছা মাছের চাষ কেমনে কইত্তে অইবো, অন্ আঁরতুন বেকে জাইনতে চায়’। অর্থাৎ ‘ চিংড়ি চাষ কেমন করে করতে হবে, এখন আমার থেকে সবাই জানতে চায়’। এলাকায় হনুফা এখন মধ্যমনি। নোয়াখালীর দণিাঞ্চলে পাইলট প্রোগ্রামের অধীনে প্রায় ৫০০ টি বন্দোবস্ত প্রাপ্ত ভূমিহীন পরিবারকে জি এন এ ইপির আওতায় কারিগরী সহযোগীতা দেয়া হয়েছে। এই ভূমিহীন পরিবারগুলো সরকারী খাসজমি বন্দোবস্ত প্রকৃয়ায় জমির মালিক হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের রয়েছে ৪০ ডিং পুকুর। এই চাষের জন্য প্রথমে কেউ উৎসাহী হয় নি। কারণ কৃষকরা মনে করতো গলদা চিংড়ি বাগদা চিংড়ির মত পরিবেশ বান্ধব হবে না। কিন্তু গলদা চিংড়ি মিঠা পানির মাছ হওয়াতে সে দূষনের সম্ভাবনা একেবারেই নেই। অধিকন্তু গলদা চিংড়ি স্বাভাবিক সব মাছের সঙ্গে সমন্বিত ভাবে চাষ করা অনেক লাভজনক। নোয়াখালীর চরাঞ্চলের অনেক দরিদ্র কৃষক বর্তমানে সমন্বিত চিংড়ি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

চন্দ্রমূখী বিধবা কলোনী

ভূমিহীনদের পূনর্বাসনে জন্য ’৮৯ সনে নোয়াখালীর সদরের চর বাটায় ভূমিহীদের একটি গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় গুচ্ছ গ্রামটির নাম করণ করা হয় ‘চন্দ্রমূখী’। এ গুচ্ছগ্রামটিকে এলাকার মানুষ জানে ‘বিধবা কলোনী’ হিসাবে। এখানে ১৩ টি পরিবার প্রত্যেকে এক একর পঞ্চাশ ডিসিমেল করে জমি বরাদ্ধ পায়। একটি বড় পুকুর কেটে তার চতুর্দিকে পরিবারগুলোকে ভিটি বরাদ্ধ দেয়া হয়। পুকুরের মধ্যে ও পরিবারগুলোর মালিকানা আছে। পুকুর ভিটি ও ধানি জমি মিলে প্রতিটি পরিবার মোট দুই একর জমির মালিক। উল্লেখ যোগ্য বিষয় হলো যে এ পরিবার গুলোর নারীরা সবাই ছিলো বিধবা। সে কারণে এ কলোনীকে বিধবা কলোনী বলা হয়। নেদারল্যান্ডের আর্থিক সহোযোগীতায় এ গুচ্ছগ্রাম নির্মিত হোয়েছেলো। চন্দ্রমুখী গুচ্ছগ্রামের মনোয়ারা বেগম ও হনুফা বেগম উভয়ই বিধবা ছিলেন। বর্তমানে অবশ্য তারা আবার দ্বিতীয় বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তাঁরা জানান চন্দ্রমূখী গুচ্চগ্রামের ১৩ জন অধিবাসী নিয়ে তারা একটি দল গঠন করেছেন। এ দলে সবাই মহিলা। ২০০৪ সালে গুচ্ছ গ্রামের দেড় একর আয়তনের পুকুরে তারা সমবায় ভিত্তিতে মাছ চাষ করে। মৎস্য সম্প্রসারন বিভাগ তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিন প্রদান করে। এলে এ পুকুরে কাতল, ব্রিগের্ড, সিলভার কাপ, রুই মৃগেল স্বরপুটি, গ্রাস ক্যাপ প্রভৃতি জাতের মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। এ চাষের জন্য পোনা খরচ বাবদ ৮ হাজার ৮৪ টাকা মৎস্য বিভাগ ঋণ হিসাবে প্রদান করা হয়। এক বছর পর তাদের লাভ হয় প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা। এর জন্য খরচ হয ৪ হাজার ৪ শত ৮০ টাকা। এতে প্রতিটি গুচ্ছ গ্রামের ভূমিহীন পরিবার মৎস্য চাষ করে আয়ের উৎস্য খুঁজে পেয়েছে। মধ্যবয়সী মনোয়ারা বলেন, ‘ অন্ আমরা ইছা বেইছতেও পারি, খাইতেও পারি’। জেলা মৎস্য সম্প্রসারণ বিভাগ জানায় উপকূলীয় জেলার সুধারাম থানার ৬০ টি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। প্রতিটি গুচ্ছ গ্রামে গড়ে নূন্যতম পে একটি বড় পুকুর বা দীঘি রয়েছে। এ সব দীঘিতে সমন্বিত মৎস্য ও চিংড়ি চাষ করলে দেশের অর্থনিতীতে বিরাট অবদান রাখা সম্ভব হবে। বর্তমানে ৩০ টি গুচ্ছগ্রামে এ প্রকল্প সন্তোষজনক ভাবে শুরু হয়েছে। এখানে রয়েছে ১ হাজার ৮শ পরিবার।


জলাবদ্ধতার আর্শিবাদ

মৎস্য চাষের এই প্রকল্প শুধুমাত্র নোয়াখালীর চরঞ্চল কিংবা উপকূলেই নয়। বৃহত্তর নোয়াখালীর জলবদ্ধ এলাকায় এই কর্মসূচীর ব্যপক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, চাটখিল ও লক্ষ্মীপুর জেলার কয়টি এলাকা বছরে ছয় সাত মাস জলাবদ্ধতায় কোন ফসল উৎপন্ন হয় না। অথচ এই সব জলাভূমিকে সামান্য সংস্কার করে সমন্বিত মৎস্য চাষ করলে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন বলে মৎস্য সম্প্রসারন বিভাগ জানিয়েছেন। নোয়াখালীর ব্যপক এলাকার জলাবদ্ধ জমিতে মিঠাপানির চিংড়ি চাষ সহ সমন্বিত মৎস্য চাষ করলে বিপুল পরিমান মাছের উৎপাদন হবে। এ থেকে দেশের পানি সম্পদকে যথাযথ ভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হবে। পরীামূলক ভাবে বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নের ওলি আহম্মদ মানিক তার ৫ একর জলবদ্ধ জমিতে সমন্বিত চিংড়ি চাষ করে বিপুল পরিমানে লাভবান হয়েছেন। তিনি জানান, ৫ একর জমিতে তিনি প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করে রুই কাতলা জাতীয মাছের সাথে চিংড়ি চাষ করেন বর্ষা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই। মাত্র ৭ মাসে তিনি সে জমিতে দেড় লক্ষ টাকা আয় করেন শুধু মাত্র গলদা চিংড়ি থেকে। এলাকার অন্যান্য চাষীরা বলেন দীর্ঘ দিন এ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা তাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছেলো। কিন্তু বর্তমানে মৎস্য অধিদপ্তরের গৃহিত প্রকল্পোএখন সে অভিশাপ আর্শিবাদে রুপ নিয়েছে।


--Foez 06:13, 19 January 2010 (UTC)