পরিবেশ ভাবনা:নোয়াখালী প্রেক্ষিত

From WikiEducator
Jump to: navigation, search

পরিবেশ ভাবনা:নোয়াখালী প্রেক্ষিত


মাহমুদুল হক ফয়েজ

এ বছর বৃষ্টিটা একটু আগেই নেমে গেল। বর্ষা এলেই নোয়াখালী শহরের অবস্থা তথৈবচ। জলাবদ্ধতা এমন রূপ নিয়েছে যে মানুষজন অদৃষ্টকে গালাগাল দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখে না। লক্ষ্মীনারায়ণপুরের পুরাতন হাসপাতাল সড়কে আমার বাসার সামনের অবস্থা অবর্ণনীয়। দীর্ঘ দাবি অভিযোগের পর মাস তিনেক আগে রাস্তাটি উঁচু করে পাকা করা হয়েছে। অথচ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এলাকার সমস্ত বাড়িই পানিতে ভরে গেছে। এলাকার মানুষ এখন বলছে এ রাস্তার কি প্রয়োজন ছিল। কোথাও কোথাও উঁচু রাস্তাও ডুবে গেছে। মানুষের অনুযোগ পানি সরানোর ব্যবস্থা কেন হয়নি আগে। এলজিইডি, পৌরসভা কে উত্তর দেবে? মানুষ অভিযোগ করে, ওদের খুঁজে পাওয়া যায় না। তাদের কাছে কোনো সদুত্তরও পাওয়া যায় না। আরো অভিযোগ রয়েছে, কর্মকর্তাদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লোকজন উল্টো মান সম্মান খোয়াতে হয়। আমাদের দেশ বর্ষা প্রধান। বর্ষার দেশে পানি হবেই। পানি আমাদের এক মহামূল্যবান সম্পদ। আমাদের সকল অবকাঠামো, রাস্তা-ঘাট, উন্নয়ন কর্মকান্ডে পানি ব্যবস্থাপনার চিন্তা থাকতেই হবে। বিশেষজ্ঞদের এই জ্ঞান দেয়ার ধৃষ্টতা জনগণের নেই।

সকাল থেকেই টিপ টিপ বৃৃষ্টি। আমার খাওয়ার ঘরের পাশেই আমাদের বাড়ির পুকুর। বষর্ া শুরুর আগেই পুরো পুকুরটি জলে টইটুম্বুর। পুকুর পাড়ে আম, পেয়ারা, ডালিম, জামরুল, গাছ। এগুলো সব আমার আম্মার হাতে লাগানো। এত টুকুন জায়গার মধ্যেই আরো আছে একটি দারুচিনির চারা গাছ, আছে মালতি লতা, কাঁঠালি চাপা। পেয়ারা আর আমের মাঝে দু জাতের দুটি জাম গাছ আপনাতেই বেড়ে উঠছে। একটি বড় জাম। লিকলিকিয়ে বেড়ে উঁচু হয়ে গেছে। গত দুবছর ওটাতে বড় বড় জাম ধরছে। তার পাশেই আছে আরেকটি ছোট জাতের জাম গাছ। বহু দিন থেকে ওটাতে ছোট ছোট জাম ধরছে। ওগুলোও খাওয়া যায়, তবে বড় জামের মতো স্বাদের নয়। স্থানীয় ভাষায় বলে ‘কাউয়া জাম’ বা কাক জাম। পাখির প্রিয় খাদ্য।

মার্চের শেষে বা এপ্রিলে গাছ ঝেঁকে ফুল আসলে অপূর্ব লাগে। আর ফলও ধরে অসংখ্য। গাছটি পুকুরের দিকে কিছুটা ঝুঁকে আছে। গাছের ছায়া পড়ে পানিতে। পুকুরে আছে কিছু শেওলা, ছোট কচুরী পানা বুনো ঘাস আর কলমী লতা। ওখানে ফড়িং ভ্রমর বোলতা উড়ে যায়। নতুন পানিতে মাছের টুকটাক লাফালাফি। ছোট জাম গাছে প্রতিদিন অসংখ্য পাখি মাতামাতি করে। আমি ল্য করি ফিঙে শালিক শ্যামাদের রাজত্ব সে গাছে একটার পর একটা পাকা ফল খাচ্ছে আর ডেকে ডেকে পাড়া উজাড় করছে। এরমধ্যে আমি ল্য করি টুনটুনি, মধুপ, নীলকন্ঠীসহ আরো কিছু ছোট ছোট পাখি কাঁঠালী চাপা, পেয়ারা, জামরুল, গাছের ডালে এসে উড়ে উড়ে পোকা মাকড় খাচ্ছে। কখনো কখনো লুটিয়ে পড়ে কাঁঠালী চাপা আর মালতি লতার ঝোঁপে। মধুপ আর নীলকন্ঠী পাখি এসে বাগানো জবা স্বর্ণচাপা ফুলের মধু তার ছুঁচালো ঠোঁট দিয়ে খেয়ে নিচ্ছে। একটা মাছ রাঙা পাখি বসে আছে ঝুলে থাকা জামের ডালে। এক্ষুণি টুপ করে ডুব দিয়ে একটা ছোট মাছ ধরে নিবে। তার এদিক ওদিক ইতিউতি চাহুনি। মাঝে মাঝে শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুরে ফিরে চাওয়া। খাওয়ার ঘরের ছোট জানালা গলিয়ে বাইরের এই অপূর্ব প্রকৃতি যে কাউকে আবিষ্ট করে দেয়। এই জানালাটি বাড়ির সবার মতো আমারও খুব প্রিয়। আমার দু সন্তান বৃষ্টি আর রৌদ্র গভীর কৌতুহল নিয়ে এসব দেখে। ছোট্ট রৌদ্র অবাক বিস্ময়ে আবেগে ছড়া কাটে ‘আমি হব সকাল বেলার পাখি’।

জানালার পাশে টেবিলে বসে এ ভাবে দেখে দেখে ভেবে ভেবে, সময় যাচ্ছিলো বয়ে। হঠাৎ করেই টেলিফোনটা বেজে ওঠলো। রিসিভার উঠাতেই ওদিকে ভারী কন্ঠ ‘হ্যালো আমি মনু গুপ্ত’। দীর্ঘদিন তার সঙ্গে দেখা হয় না। ছোট্ট একটি বেসরকারি সংস্থা রিমোন্ডের কর্মকর্তা। সংস্কৃতি কর্মী। ছোটখাট এনজিও হলেও একে দাঁড় করানোর জন্য তার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। কুশল আলাপের পর জরুরি কথা তুললো মনুগুপ্ত। ৬ জুন পরিবেশ বিষয়ক একটি সেমিনার আয়োজন করেছে রিমোল্ড। আমাকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানালেন। কিছুণ পরেই লোকমারফত নিমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়ে দিল। কার্ডে দেখলাম বিআরডিবি ট্রেনিং সেন্টারে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সেমিনারের বিষয় ‘নোয়াখালী জেলার পরিবেশ বিপর্যয় ও সম্ভাব্য সমাধান’। প্রধান অতিথি থাকবেন সংসদ সদস্য মোঃ শাহাজাহান এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল হায়দার । এ উপলে পরিবেশ মেলারও আয়োজন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠান আরম্ভ হবার কথা সাড়ে নয়টায়। কিন্তু প্রায় পৌনে এগারটা বেজে গেলেও সভাপতি অথবা প্রধান অতিথি কেউই উপস্থিত হতে পারেননি। আয়োজকরা বার বার বলেন, প্রধান অতিথির জন্য অপো করা হচ্ছে। প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য মোঃ শাহজাহান বাজেট অধিবেশনের জন্য ঢাকায় রয়েছেন। এদিকে অভ্যাগত অতিথিরা অধৈর্য্য হয়ে উঠছে দেখে প্রায় পৌনে এগারটায় সেমিনার শুরু হলো। সভাপতিত্ব করলেন প্রবীন সাংবাদিক কামাল উদ্দিন আহমেদ। জেলা প্রশাসকের অনুপস্থিতিতে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে থাকলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ ইব্রাহিম খলিল। সেমিনারের সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন এনআরডিএস-এর প্রকল্প সমন্বয়কারী আব্দুল আউয়াল।

‘নোয়াখালী জেলার পরিবেশ বিপর্যয় ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শিরোনামে প্রবন্ধ তৈরি করেন নোয়াখালী উপকূলীয় বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অসিত রঞ্জন পাল। নানা উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্য সমৃদ্ধ লেখাটি অনেকেই পছন্দ করেছেন। পরিবেশ এখন ব্যক্তি পর্যায় থেকে বিশ্ব ব্যাপী ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লাগামহীন তথাকথিত উন্নয়নে এখন তাবৎ প্রাণীকূল হুমকীর মুখে। দিন দিন পৃথিবীর মানুষসহ সকল প্রাণী মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। এর জন্য মানুষের লোভাতুর কর্মকান্ডই বেশি দায়ী। ‘পৃথিবী ব্যাপী পরিবেশ সমস্যা এবং এর বিরূপ প্রভাব প্রকট আকার ধারণ করায় সারা বিশ্বের মানুষ এখন শংকিত। উন্নত বিশ্বে কল কারখানা বর্জ্য পদার্থ বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইত্যাদির কারণে বিশ্বের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অথচ এর দায়ভার পোহাতে হচ্ছে আমাদের মতো গরীব দেশের গরীব জনগণের। গত এক দশকে পৃথিবীর নিরীয় বনাঞ্চলের পরিমাণ ১৯০ কোটি হেক্টর থেকে কমে ১৭০ কোটি হেক্টরে দাঁড়িয়েছে অর্থাৎ প্রতি বছরে পৃথিবী থেকে এক শতাংশ হারে বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর বায়ু মন্ডলে কার্বনডাই অক্সাইডের মাত্রা ক্রমান্বয়েই বেড়ে চলেছে। দুশ বছর আগে শিল্প বিপ্লবের শুরুতে এর হার ছিল প্রতি লাখে মাত্র ২৮০ ভাগ, ১৯৭২ সালে প্রতি লাখে ৩২৭ ভাগ, ১৯৯৫ সালে ৩৬০ এবং ২০০০ সালে ৩৮০ ভাগের ওপরে উঠে এসেছে। ভূমন্ডলের ট্রফিক্যাল ফরেষ্ট ধ্বংস হওয়ার কারণে প্রতি মিনিটে একটি করে জীব প্রজাতি লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অনিয়মিতভাবে সমুদ্রে মৎস্য শিকারের প্রচন্ডতা এবং বর্ধিত জনসংখ্যার চাপের কারণে মাথাপিছু মাছ ধরার পরিমাণ ১১ ভাগ কমে গেছে। অনিয়ন্ত্রিত শিল্প উন্নয়নের কারণে শিল্প উন্নত দেশগুলি বছরে ৪০ কোটি টনেরও অধিক পরিমাণ বর্জ্য সাগর মহাসাগরে নিপে করছে। শিল্প কারখানা যন্ত্রযান হতে উদগিরীত ধোঁয়া দূষিত বায়ুর প্রভাবে শুধুমাত্র এশিয়াতেই প্রতি বছরে প্রায় ১০ লাখ লোকের জীবনাবসান হচ্ছে। বায়ু মন্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ভূ-পৃষ্ঠের উত্তাপ বিগত ১০০ বৎসরে ০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে এবং হার অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ভূ-পৃষ্ঠের গড় উত্তাপ ১ থেকে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উন্নীত হবে যা ভবিষ্যতে পৃথিবীতে মানুষের বসবাসের পে এক মারাত্মক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে। (সেমিনার প্রবন্ধ পৃ: ২)।

বাংলাদেশ ঘন বসতিপূর্ণ চিরসবুজ বৈচিত্রের দেশ। সবুজ প্রকৃতির এক অপূর্ব নিস্তব্ধতায় ছেঁয়ে আছে এর নিসর্গ। হাজার বছর ধরে প্রবাহমান এর নৃ-তাত্ত্বিক ও প্রাকৃতিক সংস্কৃতির ধারা। প্রকৃতি আর মানুষ এখানে একাকার । এখন ছোবল মারছে পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশগত ভাসাম্যহীনতা। এর কারণও অনেক। অধিক জনসংখ্যা, দারিদ্র, অবাধ বৃ নিধন, বনাঞ্চল হ্রাস অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন, যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও ব্যবহৃত উচ্চ শব্দযুক্ত হর্ণ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের যথেচ্ছ, ব্যবহার ও শিল্প কারখানা হতে নির্গত ধোঁয়া, অপরিষ্কার ও বদ্ধ জলাশয়, ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার, অপরিকল্পিত বাঁধ ও রাস্তা-ঘাট নির্মাণ। এসব পরিবেশ বিপর্যয় রোধে দেশে প্রচলিত কিছু আইন ও বলবৎ রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো পলিমাটি সমৃদ্ধ জৈব বৈচিত্রের অঞ্চল নোয়াখালী। ভূ-বিজ্ঞানীরা বলেন, মেঘনার মোহনায় পলিমাটি দিয়ে গঠিত হয়েছে এর ভূমি। মেঘনার করাল গ্রাসে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে মূল শহর। এখন আবার তা গড়ে দেিণ বহুদূর চর জেগে এর আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে। দণি উপকূলে নিত্য চলছে ভাঙা গড়ার কান্তিহীন খেলা। নোয়াখালীর সামাজিক ও রাজনেতিক পরিবেশ অনেক উন্নত। কলকারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য এ জেলায় নেই। তবে জলাবদ্ধতা এ জেলার প্রধান পরিবেশ বিপর্যয়। এর সাথে রয়েছে পানীয় জলের সংকট, আর্সেনিক দূষণ, উপকূলীয় বনাঞ্চল ধ্বংস, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার, চিংড়ি চাষ, মাছের পোনা নিধন, বাঁধ স্লুইচ গেট, কালভার্ট রাস্তা প্রভৃতি নির্মাণ, কাঁচা পায়খানা, খাল ভরাট, ইটভাটা নির্মাণ ওয়েল্ডিং কারখানা ইত্যাদি। প্রবন্ধ পাঠের পর ছিল তিনজন প্যানেল আলোচকদের আলোচনা। এতে আলোচনা করেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নজমুল হক, সিডিএসপির কৃষি কর্মকর্তা ডঃ শেখ মোঃ আব্দুস সাত্তার এবং এসএলডিপি-২ ডানিডার এরিয়া কোর্ডিনেশন অফিসার মোঃ আবু সাঈদ মিয়া। সবার আলোচনাতেই পরিবেশের গুরুগম্ভীর আলোচনা হলো। পরিবেশ রা দরকার নাকি উন্নয়ন দরকার। তত্ত্ব আর তথ্য দিয়ে সবাই পরিবেশের খুঁটিনাটি আলোচনা করলেন। সবচেয়ে বেশি আলোচিত হলো নোয়াখালীর সীমাহীন জলাবদ্ধতা। এর জন্য অপরিকল্পিত রাস্তা বাঁধ নির্মাণ এবং নোয়াখালীর দুঃখ নোয়াখালীর খালকেই দায়ী করলেন। নোয়াখালী শহরের পািন নিষ্কাশনের জন্য অনেক

ডোবা খাল মানুষ ভরাট করে দখল করে নিয়েছে। নোয়াখালীর এক সময়ের ব্যস্ততম বন্দর বাজার চৌমুহনী এখন নৌ বাজার নেই। পুরো খালটিই এখন দখল হয়ে গেছে। এ নিয়ে ‘পাক্ষিক লোক সংবাদ’সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় অসংখ্যক লেখালেখি হয়েছে। এরই মধ্যে এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল হায়দার অল্প সময়ের জন্য সেমিনারে আসলেন। একটি সংপ্তি ভাষণও দিলেন। খাল দখল ও খালের নাব্যতা রার ব্যাপারে জেলার এলিটদের ওপর ছেড়ে দিলেন তিনি। যা অনেকের মতে অসম্ভব ব্যাপার। কারণ এই এলিটদের অনেকেই খাল দখলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তাদের দ্বারা এটা কিভাবে সম্ভব? যা একমাত্র করা যাবে জেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক মতা বলেই। জনস্বার্থে যথাযথ আইনও তার হাতে রয়েছে। ঠিক ওভাবে জেলার দণি উপকূলে হাজার হাজার একর জমি প্রভাবশালীরা দখল করে আছে। নির্মাণ করছে অবৈধ অপরিকল্পিত চিংড়ি ঘের। বনবিভাগের সৃজিত অনেক বন ধ্বংস হচ্ছে। বয়ার চরের বন তো ইতোমধ্যেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অথচ বয়ার চরের প্রায় ২০ হাজার একর বন জেলাবাসীর গৌরব হয়ে থাকতে পারতো। অন্যদিকে উপকূলবাসীকে বাঁচানোর জন্য যে সবুজ বেস্টনী বনবিভাগ অকান্ত পরিশ্রম করে গত ২০ বছর ধরে তিলে তিলে সৃষ্টি করেছে। মানুষের বিবেকহীন অপরিণাম দর্শিতার কারণে আজ তা নিশ্চিহ্ন। বন বিভাগ মনে করে প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে সে বনকে সহজেই রক্ষা করা যেত।


আলোচনা হলো আর্সেনিক সংক্রান্ত বিষয়ে। ভূ-গর্ভস্থ পানি অধিক ব্যবহার, কীটনাশক রাসায়নিক সার প্রভৃতির কারণে নোয়াখালীর বেশ কিছু অঞ্চলে আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ পর্যায়ে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের বিষয় জোর দেয়া হয়েছে। নোয়াখালীতে প্রায় এক ল্য বড় পুকুর রয়েছে যা যথাযথ সংরণ ও ব্যবহার করে আমরা পানির অভাব দূর করতে পারি। কথা উঠলোডিপিএইচই- ডানিডার পানি সরবরাহ প্রকল্প প্রসঙ্গে। ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে নীচের পানিতে আর্সেনিক দেখা দিয়েছে। যদি তাই হয় তবে একলাশপুরে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে যে পানি সরবরাহ করা হবে তাতে যদি আবার আর্সেনিক অথবা অন্য কোনো দূষণ দেখা দেয় তখন কি অবস্থা হবে।

আমাদের উপরের পানি দূষিত। টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক। গভীর তলদেশের পানিই এখন একমাত্র ভরসা। তাও যদি ডিপিএইচই ডানিডার অপরিণামদর্শী খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বিষাক্ত হয়ে যায় তাহলে সামনে যে ভয়াবহ দুর্যোগের সৃষ্টি হবে তা কল্পনা করতে গা এখনো শিহরিত হয়ে ওঠে। আলোচনায় মোঃ আবু সাঈদ মিয়া জানালেন যে কোনো প্রকল্প গ্রহণ কিংবা স্থাপনের আগে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হবে কিনা তা যাচাই করা হয়। যাকে বলে ইআইএ। (EIA-Environmental Impact Assess) কিন্তু ভয়াবহ ব্যাপার হলো এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল হক জানালেন এ ব্যাপারে তার কিছুই জানা নেই। তাহলে প্রশ্ন এসে যায়, এত বড় ব্যয়বহুল প্রকল্পে ঝুঁকি কেন নেয়া হলো। সত্যিই যদি কোনো দুর্যোগ এসেই যায়। তাহলে এর জন্য দায়ী কে হবে? বিশেষজ্ঞরা? সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান? কিংবা জনগণ? গণস্বারতা অভিযানের কর্মকর্তা তপন কুমার দাশ প্রশ্ন রাখেন, এমন ঘটনা যদি ঘটে তা হলে তিগ্রস্ত জনগণ কি মামলা করতে পারবে? আমার ভাবনা হয় তিগ্রস্ত জনগণ মামলা করে কোনো কিছু কি অর্জন করতে পেরেছে? সভ্যতা ধ্বংস হলে কার বিরুদ্ধে কে মামলা করবে?

শেষ বিকেলে পরিবেশ যখন দুনিয়া ঘুরে এলো সবাই ঘাড় বাঁকিয়ে দেখলো সেমিনার করে পাশেই মাইজদী বড় দিঘির দিকে। এ দিঘি থেকেই এক সময় মাইজদীতে পানি সরবরাহ হতো। দিঘিটির দায়িত্বে রয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। সে দিঘিটি এখন পরিবেশ দূষণের শিকার। কচুরীপানা আর ময়লা আবর্জনায় ভরে আছে। আমাদের চোখের সামনেই এমন জলাধারটি দূষিত হয়ে থাকবে আর আমরা আরাম করে পরিবেশের কথা বলবো, তা কি হয়?

দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার মধ্যে নোয়াখালী সত্যিই এক অনন্য সুন্দর জেলা। মাইজদী শহরটি অনেকেরই প্রিয় শহর। এটি না শহর না গ্রাম। পরিবেশ বিপর্যয় এখনো প্রকট আকার ধারণ করেনি। প্রস্তাব এসেছে পরিবেশ রক্ষার জন্য জেলার সচেতন মানুষদের নিয়ে একটি পরিবেশ ফোরাম জাতীয় কিছু করা যায় কিনা। তবে এ কথা সত্যি যে পরিবেশ যতন করার দায়িত্ব এ জেলাবাসীরই। পরিবেশ সচেতন হয়ে সচেষ্ট হলে এ শহরটি দেশের এক অনন্য সুন্দর বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে।


মাহমুদুল হক ফয়েজ


--Foez 11:45, 18 September 2010 (UTC)